
“সারাহ মন খারাপ কেন?”
“কেউ অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে ঘাটাঘাটি কেন করে বলতে পারো?”
“খুবই খারাপ বিষয়। এই বিষয়ক হাদীস বলি। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে একজন মুমিন অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিত্যাগ করবে।
(তিরমিজি, সুনান ইবনু মাজাহ)
“আজ আমার ম্যাথ ক্লাসে পরীক্ষা হয়েছে। নম্বর খুবই কম এসেছে। আমার এক ক্লাসমেট জোর করে মার্কসটা দেখলো। কম আসুক বা বেশি ও সবসময়ই দেখে, আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও। আর দুইটা ক্লাস শেষ হতে না হতেই আমার মার্কস ক্লাসের সবার জানা হয়ে গেছে! পাশের সেকশন থেকে একজন টিফিন টাইমে এসে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি নাকি শূন্য পেয়েছ? বাসায় পড় না?” অথচ আমি শূন্য পাইনি! আর যদি পাইও ওরা এটা নিয়ে এতো ব্যস্ত কেন?”
“হুম। তোমাকে আরও চেষ্টা করতে হবে পড়াশোনার বিষয়ে।
এই ঘটনায় কিন্তু অনেকগুলো ইসলামের নীতির খেলাপ হয়েছে। কারো ব্যক্তিগত বিষয় জানার চেষ্টা করাই একটা অপরাধ। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
যে ব্যক্তি কোন গোষ্ঠীর ঘরে তাদের বিনা অনুমতিতে উঁকি মারে এবং তারা (দেখতে পেয়ে) তার চোখ ফুটিয়ে দেয়, তবে তাতে কোনো (দণ্ডনীয়) রক্তপণ (দিয়াত) বা অনুরূপ বদলা (কিসাস) নেই।
অথচ দেখো মানুষের বিষয়ে জানতে আমরা কত আগ্রহী, সেটা হারাম উপায়ে হলেও। এখন তো মানুষ নিজ ঘরে যে অপরাধ করে সেটাও অনেকে ছড়িয়ে দেয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। জঘন্য অপরাধ এসব। সংশোধনের সঠিক পদ্ধতি এটা না।”
“আর সবাইকে বলে বেড়ানোটা কেমন?”
“ধরো ও জোরজবরদস্তি করে মার্কস দেখেনি। তুমি নিজেই দেখালে চুপচাপ, দেখানোর সময় একটু সংকোচে ডানে বামে তাকালে তাতেই ওর বোঝা উচিত যে এটা তোমার গোপন বিষয়। ” কাউকে বলো না” বলাটা জরুরি না। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
যদি কোনো লোক তোমাকে কিছু জানায়, তারপর চারপাশে তাকায়, তাহলে সেটা আমানত। [তিরমিযি ১৯৫৯, শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন]
গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টা এতোটাই জরুরি ইসলামে যে রসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীদের দ্বারা একবার এমন একটা ভুল হয়ে যায়। হাফসা (রা.) আঈশা (রা.) কে রসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি গোপন বিষয় বলেছিলেন, যা তিনি বলতে নিষেধ করেছিলেন। সূরা তাহরীমে এ বিষয়ক আয়াত আছে। ফলস্বরূপ রসূলুল্লাহ ﷺ স্ত্রীদের থেকে এক মাস দূরে ছিলেন, তার মানে গোপনীয়তা ভঙ্গের জন্য শাস্তি দেয়া যায়। তাঁদের জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। এবং কেউ ভুল করে ফেললেই তার সব শেষ না। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তওবাকারীদের ভালোবাসেন। সাহাবীরা তাদের সন্তানদেরও অন্যদের গোপনীয়তা রক্ষার শিক্ষা দিতেন। আনাস বিন মালিক (রা.) ছিলেন রসূলুল্লাহ ﷺ এর খাদেম। তাকে রসূলুল্লাহ ﷺ গোপন কাজের দায়িত্ব দিলে তার মা উম্ম সুলাইম (রা.) সেই গোপনীয়তা কারো কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন। আনাস (রা.) আজীবন সে শিক্ষা ধরে রেখেছিলেন।”
“খুব কঠিন কাজ মনে হচ্ছে।”
“হুম। অভ্যাসের বিষয় অবশ্যই। প্রথমে জানা ও পরে আমলের অভ্যাস করা”
“অন্য সেকশনের মেয়েটা যে বললো আমি শূন্য পেয়েছি এটা তো মিথ্যা কথা। হাদীসে তো আছে,
“কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়।” [মুসলিম]
“ওরও ভুল হয়েছে৷ ক্লাসমেটদের সতর্ক করো, সেই সাথে ক্ষমাও। আমরাও তো ভুল করি, আমাদেরও ক্ষমা পেতে হবে তাই না?”
“আল্লাহ মাফ করুক। আমি শুধু বুঝি না। এতো দ্রুত কীভাবে গল্প ছড়ায়!”
“তুমি তো গণিত করতে চাও না। গণিত জানলে বুঝবে যে এটা সাধারণ ধারার অংক। ইয়াকভ প্যারেলম্যান নামক একজন লেখক তার ” Mathematics can be fun” বইয়ে আড়াই ঘন্টার মধ্যে শহরভর্তি মানুষ কীভাবে গুজব জানবে সে হিসাব করে দেখিয়েছেন! প্রযুক্তির ব্যবহার করলে আসলে আড়াই ঘন্টাও অনেক বেশি!”
“কী বলো!”
“হ্যা। ইয়াকভ তার বইতে একটা ঘটনার বর্ণনা দেন। যেখানে রাজধানীতে থাকা এক লোক অন্য এক শহরে সকাল ৮টায় আসে, যার জনসংখ্যা ৫০,০০০ । তার কাছে একটা খবর ছিল। সে যে বাড়িতে থামে, সেখানে মাত্র তিনজনকে ঘটনা জানায়। ততক্ষণে বাজে ৮:১৫. তারমানে এই ১৫ মিনিটে জানলো চারজন। এরপর প্রতিজন আবার আরও তিনজনকে জানায়, জানাতে একই রকম সময় লেগে যায়৷ অর্থাৎ ৮:৩০ এ জানবে ৪+ (৩×৩) = ১৩ জন। প্রতি নতুন জানা একজন আবার তিনজনকে জানানোর এই ধারা অব্যাহত থাকলে , পৌনে নয়টায় জানবে ১৩ + (৩ × ৯) = ৪০ জন৷ নয়টা সময় এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৪০ + (৩ × ২৭) = ১২১ জন। সোয়া নয়টায় খবরটা জানবে ১২১ + ( ৩ × ৮১) = ৩৬৪ জন। সাড়ে নয়টায় ৩৬৪ + (৩ × ২৪৩) = ১০৯৩ জন, মানে দেড় ঘন্টায় প্রায় ১১০০ জন।
“৫০ হাজারের তুলনায় ১১০০ তো তেমন বেশি না।”
“হ্যা। কিন্তু নতুন জানা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। হয়তো মনে হবে আরে অনেক সময় লাগবে সবাই জানতে। কিন্তু তা না। পৌনে দশটায় জানবে ১০৯৩ + (৩ × ৭২৯) = ৩২৮০ জন। দশটায় কী হবে তুমিই বলো?।”
“৩২৮০ + (৩ × ২১৮৭) = ৯৮৪১ আর সোয়া দশটায় হবে ৯৮৪১+ (৩ × ৬৫৬১) = ২৯৫২৪”
“তুমি কী বুঝেছ ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ জেনে গেছে। সাড়ে দশটার আগে মানে আড়াই ঘন্টার মধ্যে ৫০,০০০ মানুষ জেনে যাবে!”
“এতো বড় হিসাব কে বসে বসে করবে!”
“ধারার মজাটা এখানেই থাকে! গণিতবিদরা সাধারণত চেষ্টা করে এমন একটা কৌশল বের করার যেন ধারা বা প্যাটার্ন সহজে সমাধান করা যায়। এই ধারাটাই খেয়াল করো:
১ + ৩ + (৩×৩) + (৩ × ৩ × ৩) + (৩ × ৩ × ৩× ৩)
ধারাটা দেখতে সুন্দর। প্রতি ধাপে কত বাড়ছে অর্থাৎ কতজন নতুন মামুষ জানছে একটু খেয়াল করি।
১ = ১
৩ = ১ × ২ + ১
৯ = ( ১ + ৩) × ২ + ১
২৭ = ( ১ + ৩ + ৯) × ২ + ১
৮১ = ( ১ + ৩ + ৯ + ২৭) × ২ + ১
অন্যভাবে বললে, নতুন জানা মানুষের সংখ্যা পূর্ববর্তী মোট মানুষের দ্বিগুণের সাথে ১ যোগ করলেই জানা যাবে।
বিষয়টা কী দাঁড়ালো,
শেষপদ = (আগের পদের যোগফল × ২) + ১
সুতরাং, আগের পদগুলোর যোগফল = (শেষপদ – ১) ÷ ২
তাহলে শেষপদ জানা থাকলে এদের যোগফল বের করা যাবে খুব সহজে। শেষ পদ ও শেষপদের ঠিক আগের সংখ্যার অর্ধেকের যোগফল।
যেমন, ১ + ৩ + ৯ + ২৭ + ৮১ + ২৪৩ + ৭২৯
= ৭২৯ + (৭২৮ ÷২)
= ৭২৯ + ৩৬৪
= ১০৯৩
“তুমি কি আমাকে গণিত শেখালে নাকি ইসলামী আদব? বলতে পারো দুইটাই। কথা কোন গতিতে ছড়াতে পারে অঙ্ক কষে দেখালাম। যদি লোকগুলো আরও বাচাল হতো তো আরও কম সময় লাগতো ”
“হুম। জিহবার জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো! যদি আমরা আনাস বিন মালিকের (রা.) মতো গোপন কথার আমানতদার হতে পারতাম!”
“আল্লাহ তৌফিক দান করুক, আমীন!”