আকাশের গলিঘুপচি

শহুরে গা ঘেঁষা দালানগুলোর জন্য হয়তো ঠিকঠাক কোনোদিন আকাশই দেখতে পারোনি। তারপরও রাস্তা বা বাসার জানালা দিয়ে একদম ছোট্টবেলায় মা নিশ্চয়ই তোমাকে চাঁদকে চিনিয়েছেন। হয়তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, চাঁদ মামার সাথে। চাঁদ কেন মামা সেই প্রশ্ন যেন আমাকে কোরো না। আরও অনেক প্রশ্নোত্তরের মতো এ-ও আমার অজানা। তুমি হয়তো জানো, চাঁদের নিজের আলো নেই। সূর্যের আলোতে আলোকিত হয় বলে আমরা উজ্জ্বল দেখি। আচ্ছা, তুমি কি কখনো দেখেছো, চাঁদের পাশে খুব জ্বলজ্বলে বড় একটা তারা? জেনে অবাক হবে, ঝকঝকে বড় তারাটি কোনো ‘তারা’ নয়, সেটি বৃহস্পতি গ্রহ। গ্রহ মানে যার নিজের আলো নেই। সূর্যের আলো ওর গায়ে পড়ে ছিটকে আসে বলেই ওকে তারা মনে হয়। অথবা তোমার কি চোখে পড়েছে, লালচে গ্রহ মঙ্গলকে? শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা নামে যাকে চেনো, সে আসলে শুক্র গ্রহ। গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না, তারাদের থাকে। মেঘমুক্ত রাতে আকাশ ভর্তি তারা দেখেছো কিন্তু সবাই তোমার অচেনা। এমনই কিছু তারকাগুচ্ছকে বলা হয় নক্ষত্রমণ্ডল। আজ কয়েকটি নক্ষত্রমন্ডলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।

১। Orion (কালপুরুষ)

নক্ষত্রমন্ডল নিয়ে গপ্পগাঁথার শেষ নেই। সেই গপ্পের ঝুলি খুললে লাভ আর ক্ষতির অনুপাতটা কত তা আজ না বলি। তবে চেনার সুবিধার জন্যই নামকরণের কেচ্ছা-পুরাণ বাধ্য হয়ে কিছুটা বলতেই হচ্ছে। কালপুরুষকে তুলনা করা হয় এক যুদ্ধংদেহি পুরুষের সাথে, যে এক হাতে মুগুর আর আরেক হাতে বর্ম নিয়ে প্রস্তুত। কোমরের বেল্টে তিনটে জ্বলজ্বলে তারা এক সারিতে দাঁড়িয়ে। আকাশের মাঝ বরাবর একে পাওয়া যাবে অক্টোবর থেকে পুরো শীতকাল। ছবির সাথে মিলিয়ে দেখো। আশা করি চিনতে পারবে। এপ্রিলের দিকে কিন্তু সে পশ্চিম আকাশে ডুব দিবে, আর খুঁজে পাবে না। 

ঘুপচি

শহুরে গা ঘেঁষা দালানগুলোর জন্য হয়তো ঠিকঠাক কোনোদিন আকাশই দেখতে পারোনি। তারপরও রাস্তা বা বাসার জানালা দিয়ে একদম ছোট্টবেলায় মা নিশ্চয়ই তোমাকে চাঁদকে চিনিয়েছেন। হয়তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, চাঁদ মামার সাথে। চাঁদ কেন মামা সেই প্রশ্ন যেন আমাকে কোরো না। আরও অনেক প্রশ্নোত্তরের মতো এ-ও আমার অজানা। তুমি হয়তো জানো, চাঁদের নিজের আলো নেই। সূর্যের আলোতে আলোকিত হয় বলে আমরা উজ্জ্বল দেখি। আচ্ছা, তুমি কি কখনো দেখেছো, চাঁদের পাশে খুব জ্বলজ্বলে বড় একটা তারা? জেনে অবাক হবে, ঝকঝকে বড় তারাটি কোনো ‘তারা’ নয়, সেটি বৃহস্পতি গ্রহ। গ্রহ মানে যার নিজের আলো নেই। সূর্যের আলো ওর গায়ে পড়ে ছিটকে আসে বলেই ওকে তারা মনে হয়। অথবা তোমার কি চোখে পড়েছে, লালচে গ্রহ মঙ্গলকে? শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা নামে যাকে চেনো, সে আসলে শুক্র গ্রহ। গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না, তারাদের থাকে। মেঘমুক্ত রাতে আকাশ ভর্তি তারা দেখেছো কিন্তু সবাই তোমার অচেনা। এমনই কিছু তারকাগুচ্ছকে বলা হয় নক্ষত্রমণ্ডল। আজ কয়েকটি নক্ষত্রমন্ডলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।

১। Orion (কালপুরুষ)

নক্ষত্রমন্ডল নিয়ে গপ্পগাঁথার শেষ নেই। সেই গপ্পের ঝুলি খুললে লাভ আর ক্ষতির অনুপাতটা কত তা আজ না বলি। তবে চেনার সুবিধার জন্যই নামকরণের কেচ্ছা-পুরাণ বাধ্য হয়ে কিছুটা বলতেই হচ্ছে। কালপুরুষকে তুলনা করা হয় এক যুদ্ধংদেহি পুরুষের সাথে, যে এক হাতে মুগুর আর আরেক হাতে বর্ম নিয়ে প্রস্তুত। কোমরের বেল্টে তিনটে জ্বলজ্বলে তারা এক সারিতে দাঁড়িয়ে। আকাশের মাঝ বরাবর একে পাওয়া যাবে অক্টোবর থেকে পুরো শীতকাল। ছবির সাথে মিলিয়ে দেখো। আশা করি চিনতে পারবে। এপ্রিলের দিকে কিন্তু সে পশ্চিম আকাশে ডুব দিবে, আর খুঁজে পাবে না। 

২। Cassiopeia (ক্যাসিওপিয়া) 

এই মন্ডলের কয়েকটি তারা মিলে উলটানো ‘M’ বা ‘W’ এর মতো প্যাটার্ন তৈরি করে। ইথিওপিয়ার রাণি ক্যাসিওপিয়ার নামে নাম এই নক্ষত্রমন্ডলের। চেয়ারে উপবিষ্ট রাণির সাথে তুলনা করা হয় এই তারকামন্ডলকে। জানুয়ারি মাসে উত্তর আকাশে রাণিকে স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যায়। ধ্রুবতারার একদিকে রাণি ক্যাসিওপিয়া আরেক দিকে সপ্তর্ষিমন্ডল। তুমি হয়তো ধ্রুব তারাই চেনো না! আদিমকালের মানুষের তো আর কম্পাস ছিল না। রাতের ভ্রমণে উত্তর-দক্ষিণ চিনতে পারতো এই উজ্জ্বল ধ্রুব তারা দেখে। 

আল-কুরআনে বলা হয়েছে-

তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে।[আল-আন’আম : ৯৭] 

ধ্রুবতারা উত্তর আকাশে দিগন্তের এক চতুর্থাংশ উপরে এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে সারাটা! দিগন্তে মিলাতে চাইলেও ধ্রুবতারার জন্য পারেনা ক্যাসিওপিয়া। সারাবছরই একে পাওয়া যায় কখনো উত্তর আকাশের পশ্চিমে বা পুবে। 

৩। Sagittarius (ধনু) 

জুনে ধনুর আগমন হবে দক্ষিণ-পূর্ব দিগন্তে। নভেম্বরে সে মিলিয়ে যাবে আবার পশ্চিমে। ধনুক হাতে পশ্চিম দিকের বৃশ্চিক নক্ষত্রমন্ডলকে তাড়া করছে যেন এই Sagittarius. একে Milk Dipper ও বলা হয়। 

৪। Scorpion (বৃশ্চিক) 

ধনুর পূর্বে থাকা বিছার মতো দেখতে নক্ষত্রমন্ডল হলো বৃশ্চিক। নামের সাথে এতো মিল আর কোনো নক্ষত্রমন্ডলের নেই। এর মাথার দিকের তিনটি তারা প্রায় সরলরেখায় আছে। ধনু যেহেতু একে তাড়া করছে, বাংলাদেশের রাতের আকাশে একে পাওয়া যাবে দক্ষিণ দিকেই। দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে সে দেখা দেয় মে মাসে আর পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যায় অক্টোবরে।

৫। Ursa Major (সপ্তর্ষি মন্ডল)

Ursa Major একটা বৃহদাকার ভল্লুক। ফেব্রুয়ারী মাসের উত্তর-পূর্ব আকাশে বিশাল এক প্রশ্ন চিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর আকাশে ধ্রুবতারার যে দিকে রাণি ক্যাসিওপিয়াকে পাওয়া যাবে তার উলটো দিকে এর অবস্থান। ভারতীয় কাহিনিতে তার রূপ এক ময়ূরের মতো, সাতজন ঋষিকে নিয়ে তৈরি এই মন্ডল! তাই নাম হয়েছে সপ্তর্ষি। আমেরিকাতে অবশ্য একে Great Dipper বা বড় পেয়ালা বলা হয়। ধ্রুব তারার সাথে লাগোয়া ছোট প্রশ্নবোধকের সাথে একে মিলিয়ে ফেলো না, সে হলো Ursa Minor বা নক্ষত্রমন্ডল শিশুমার অথবা লঘু সপ্তর্ষি। ক্যাসিওপিয়ার মতোই সপ্তর্ষিমন্ডলকে উত্তর আকাশের পূর্ব বা পশ্চিমে সারা বছর দেখা যাবে।

৬। Ursa Minor (লঘু সপ্তর্ষি) 

আগেই বলেছি অতীতে মানুষ যে তারাটি দেখে পথ চিনতো সেটি হলো ধ্রুবতারা (Pole star/ Polaris)! বাংলাদেশ থেকে এটাকে উত্তর আকাশে দেখা যায়! ধ্রুব মানে তো আমরা বুঝিই। যেটার নড়চড় হয় না আরকি। ধ্রুবতারাকে উত্তর গোলার্ধ থেকে দেখলে মনে হয় উত্তর আকাশে ঠায় দাঁড়ানো এক তারা। যদিও আকাশে ঠায় দাঁড়িয়ে কেউ নেই, সে আমরা জানি। এই তারাটিকে পাওয়া যায় লঘু সপ্তর্ষি নক্ষত্রমন্ডলে। 

সপ্তর্ষি আর লঘু সপ্তর্ষি একটি আরেকটির মুখোমুখি হয়ে উত্তর আকাশে অবস্থান করে৷ বড় আর ছোট দুই প্রশ্নবোধক চিহ্ন যেন!

নক্ষত্রমন্ডল পরিচিতি কিন্তু জ্যোতিষ-শাস্ত্র শেখাচ্ছে না, শেখাচ্ছে জ্যোতির্বিদ্যা। Astronomy বা জ্যোতির্বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞান আর Astrology বা জ্যোতিষশাস্ত্র হলো জ্বীনের সাহায্যে যাদুকরদের সত্যের সাথে মিথ্যা-মেশানোর ব্যবসা। দুই-এ বিস্তর পার্থক্য! নক্ষত্রমন্ডল আল্লাহ্‌র নিদর্শন মাত্র। মানুষের জন্ম-মৃত্যু,স্বভাব-চরিত্রের সাথে এদের সম্পর্ক নেই। 

যদি কখনো রাতে পরিষ্কার খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানোর সুযোগ হয় নক্ষত্রমন্ডলের এই বর্ণনার সাথে মিলিয়ে নিয়ো, তখন আশা করি আকাশকে ওতটা অপরিচিত লাগবে না৷

আর তিনি তোমাদের জন্যে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে এমন জাতির জন্যে যারা বুঝে। [আন-নাহ্‌ল- ১২]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *